সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৪ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: হঠাৎ করেই দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা। নারী ও শিশুর প্রতি নির্মমতা ও নির্যাতনে হতবাক ও ক্ষুব্ধ হচ্ছেন বিবেকবান মানুষ। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সিরিয়াল রেপিস্ট আরিফ ও ফতুল্লার মাওলানা আল আমিনের পর এবার আরেক ভয়ঙ্কর শিশু ধর্ষকের খোঁজ মিলল নেত্রকোনার কেন্দুয়ায়। যিনি মাদ্রাসার আবাসিকে থাকা কোমলমতি শিশুদের ধর্ষণ শেষে দোজখের আগুনের ভয় দেখিয়ে কোরআন শপথ করাতেন।
ভয় দেখিয়ে তিনি বলতেন, কাউকে বললে আল্লাহ দোজখের আগুনে পোড়াবে। আর এ ভয়ে ধর্ষিত শিশুরা কাউকে বলতো না। শুক্রবার (৬ জুলাই) সকালে এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় এলাকাবাসীর হাতে আটক হন কেন্দুয়া মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষক আবুল খায়ের বেলালী।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ধর্ষককে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় ওই দিনই কেন্দুয়া থানায় দুটি মামলা হয়।
এদিকে নিজের ফেসবুকে ধর্ষণের ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহজাহান মিয়া।
তিনি লিখেছেন, ‘কি লিখব আর কীভাবে লিখব, ভাষা পাচ্ছি না। তিনি (ধর্ষক) একজন দাওরায়ে হাদীস, (সিলেট বালুরচর কওমী মাদ্রাসা থেকে) মাওলানা, একজন বক্তা, একজন ইমাম, শুক্রবারে জুমার নামাজের খতিব। মাওলানা (!!!) আবুল খায়ের বেলালী। শুক্রবার তার বয়ান শোনার জন্য আধাঘণ্টা আগে মুসল্লীরা এসে অপেক্ষা করেন মসজিদে। কেন্দুয়ার আঠারবাড়ি এলাকায় মা হাওয়া (আ.) কওমী মহিলা মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক (মুহতামিম) তিনি, যে মাদ্রাসায় রয়েছে প্রায় ৩৫ জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্রী যাদের ১৫ জন আবাসিক। সেখানে তিনিও (ধর্ষক) আবাসিক। সময় সুযোগ বুঝে তিনি কলিংবেল চাপেন আর ওনার পছন্দমত একজন কোমলমতি ছাত্রীর ডাক পরে তার গা-হাত-পা টিপে দেবার জন্য। আর এক পর্যায়ে তিনি সেই অবুঝ শিশুদের উপর ঝাপিয়ে পরেন . . . . . এবং শেষে আবার কোরআন শরীফে হাত রেখে শপথ করান, কাউকে কিছু না বলার জন্য।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহজাহান মিয়া আরও লেখেন, ‘ভয়ে কোমলমতি ছাত্রীরা কাউকে কিছু বলতো না। কিন্তু আজ এক সাহসী বীরাঙ্গনা সেই ভয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়ী হয়, বলে দেয় তার বড় বোনসহ বাড়ির সবাইকে, সেই যন্ত্রণার মুহূর্তগুলোর কথা। স্থানীয় এলাকাবাসীর সহায়তায় আটক হন সেই হুজুররূপী ধর্ষক। থানায় আটক থাকা অবস্থাতেই আরো একজন শিশু শ্রেণির ছাত্রীর অভিযোগ জমা পড়ে। দুইটি ধর্ষণ মামলা হয়েছে তার নামে।
শাহজাহান মিয়া লেখেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য পাই, গত একবছরে আরো মোট ৬ জন ছাত্রীর সাথে তিনি অনুরূপ কুকর্ম করেছেন যাদের সবারই বয়স ৮ থেকে ১১ এর মধ্যে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কিছু আলামত জব্দ করি, সাথে সেই কলিংবেলটিও, যা আদালতে উপস্থাপন করা হবে। হুজুরকে রিমান্ডে আনা হবে।
এর পরে তিনি নিজের ফেসবুকে জানান, কেন্দুয়ার সেই মহিলা কওমী মাদ্রাসার মুহ্তামিম বা প্রধান শিক্ষক মাওলানা আবুল খায়ের বেলালী দুইটি ধর্ষণ মামলাতেই ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা (নিজেকে জড়িয়ে দোষ স্বীকার করা) মোতাবেক ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে জবানবন্দী দিয়েছেন অর্থাৎ আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করেছেন। সেজন্য আর রিমান্ডের আবেদন আদালত মঞ্জুর করেনি। আদালত দুইজন ভিকটিমের বক্তব্য শুনেছেন এবং ২২ ধারা মোতাবেক তাদের বক্তব্য রেকর্ড করেছেন। আসামী আবুল খায়ের বেলালীকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
আইনগত প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপটি ভালভাবেই শেষ করতে পারলাম, ধন্যবাদ সংবাদকর্মী, এলাকাবাসী ও ফেসবুক বন্ধুরাসহ সবাইকে আমাদের পাশে থেকে সহযোগীতা করার জন্য।